অনুভব ও অন্যান্য ।। আমির





তৃপ্তি


আজ জোসনা ধারার ঢল নেমেছে,
চোখের কোণে জল নেমেছে,
এ জল তোমায় পাওয়ার!
আজ আকাশ তারি দ্বার খুলেছে,
হৃদয় খেয়া পাল তুলেছে,
আর কিছু নেই চাওয়ার!
তুমি আমার সব সাধনার-
তৃষিত সেই নারী,
ওগো তোমায় পেয়ে পূর্ণ হল
আমার হৃদয় বাড়ী।
.
আহা ভালোবাসা বাহুবলী
জয় করে সব ক্ষত,
দুঃখ,ব্যথা,যাতন,বেদন
মূমুর্ষ আজ মৃত!
তুমি আমার আশার আলো
নিরাশা গো ছাড়ি,
তুমি আমার সব সাধনার-
তৃষিত সেই নারী।
.
দেহের খোজে দেহ ওগো
মন খোজে গো প্রেম,
তুমি আমার সকল পাওয়া
হেমের চেয়েও হেম।
তুমি আমার মায়াতিথী, ছায়াবিথী-
প্রণয় প্রলয়কারী।
তুমি আমার সব সাধনার-
তৃষিত সেই নারী।



অনুভব



কত মন দেখ পড়ে আছে আঁধারে,
কত প্রেম দেখ ডুবে গেছে পাথারে!
কত হাত দেখ হাত খোজে অকাতরে,
কত আঁখি দেখ ঝরে পড়ে অঝরে!
কত মন দেখ!
.
কত কথা কত হিয়া কয়ে যায়,
কথা ব্যথা মুখ বুজে সয়ে যায়,
কত দিনে আর,
কমে এই আঁধার,
অমানিশা বুক জুড়ে বয়ে যায়।
কত সুখ ব্যথা হয় সেতারে,
কত সুর বিরহ হয়ে বাজে গীটারে,
কত মন দেখ পড়ে আছে আঁধারে,
কত প্রেম দেখ ডুবে আছে পাথারে।
.
কত বেলা দেখ গোধূলিতে ডুবে চুপ,
কত আশা দেখ নিরাশারি পোড়া ধূঁপ,
কত জলে,
আঁখি পলে,
কত বুকে দেখ নিদারুন ব্যথা রুপ।
কত দিন কাটে অশান্ত প্রহরে,
কত রাত কাটে আঁধারেরি জোয়ারে,
কত মন দেখ পড়ে আছে আঁধারে-
কত প্রেম দেখ ডুবে আছে পাথারে।
.
কত ফুল দেখ ফোটে এ পথে,
কত ভুল দেখ জীবনেরি পরতে,
কত মেঘমালা,
কত উতালা,
ফুল ফোটা এই চির শরতে।
কত চোখ দেখ ভেসে গেল নজরে,
কত ব্যথার কথা মানবেরি পাজরে,
কত মন দেখ পড়ে আছে আঁধারে!
কত প্রেম দেখ ডুবে গেছে পাথারে! 

স্মৃতিতে কৃষ্ণ চূড়া এবং || হাজেরা বেগম




স্মৃতিতে কৃষ্ণ চূড়া এবং



এই সেই কৃষ্ণ চূড়া--
যার ফুলে ফুলে ভরে 
যেত আমার ক্ষণ--
এই সেই কৃষ্ণ চূড়া
যার রঙ্গে রঙ্গে ভরে 
যেত আমার মন--
যার তলে দাড়িয়ে 
আমার আগামী স্বপ্ন সুখের
ছবি এঁকেছি...
এই সেই কৃষ্ণ চূড়া--!!

যেথায় প্রতিদিনের মিলন--
মেলা হতো শত প্রেমিক প্রেমিকার
তুমি আমার চোখে চোখ রেখে
হাতে হাত ছুঁয়ে ভালোবাসার 
কাব্য রচনা করেছিলে--
মনে কি পড়ে প্রথম সেইদিনের কথা
আমার গালে দু'আঙ্গুলে টোঁকা দিয়ে বলেছিলে
"এতো রাঙ্গা হয় লাজে"...
ভুলিনি ভুলবার নয়--
বুঝতে দু'জনের শুধু একটু দেরী 
হয়েছিলো -- ভালোবাসি কতো--
দু'জন দু'জনাকে--হারিয়ে ছিলাম 
যেদিন তোমায় -- সেদিন হতে আজও
আছি তোমার আগমনের আশায়
ফালগুনের এই দিনে - আজও আসি
যদি দেখা পাই তোমার- শুধু একটি বার-- 
আর একবার ছুঁয়ে দেখবো--
আমার না পাওয়া ভালোবাসা কে--
আকুল হয়ে শুধু কৃষ্ণ চূড়া ফুলকে 
দু'হাতে বুকে জড়িয়ে রাখি--
তোমাকে অনুভবের সমস্ত--ভালোবাসা দিয়ে--
কিন্তু কই তোমার ছুঁয়ে দেয়া--
গাল তো আর রাঙ্গা হয় না...!!
আমার দু'চোখ ঝাপসা হয়ে আসে--
তবু এই কৃষ্ণ চূড়া তলায়-তোমারই অপেক্ষায়-
থাকবো পথ চেয়ে--আমার আজীবন...!!


প্রতীক্ষা || দিপংকর রায় প্রতীক




প্রতীক্ষা


সমস্ত প্রতীক্ষা একটা সবুজ
স্বপ্নের অঙ্কুর অথবা ঝকঝকে
মোনালিসা, একটা বৃক্ষ
বাহারি স্বাদে গমগম
নীলাকাশ মাখা পুষ্পিত সিম্ফনি।
সমস্ত প্রতীক্ষা বর্ণিল জলছবির
ভানুমতি অথবা অযুত স্মৃতিভ্রম
একটা গন্তব্য, তপ্ত মরুপথে চোরাবালির
ইশারা, ধূমায়িত শ্বাস।

প্রস্তরযুগ ও অন্যান্য ।। স্বপন গায়েন



মহেঞ্জোদাড়ো




শেষ বিকেলের রোদের সাথে একটি মেয়ে
মেঘের সাথে ভাব করেছে মেঘ না চেয়ে।
শ্বেতকরবী জুঁই চামেলি হৃদয় আকাশ জুড়ে
রাত্রি লেখে হিসেব খাতায় জীবন কবর খুঁড়ে।
মনের কথা গোপন রেখো পার যদি
মহেঞ্জোদাড়োয় খুঁজলে পাবে একটি নদী।
নদীর জলে উথাল পাথাল লেগেছে এক ঢেউ
ভালোবাসার মুগ্ধ বাঁকে দাঁড়িয়ে আছে কী কেউ?
বালুকাবেলায় মেঘের সাথে গোপন অভিসার
লজ্জা রাখো শাড়ির ভাঁজে অবসান প্রতীক্ষার।


সবুজ দ্বীপ




নদীর বাঁকে সবুজ দ্বীপ
হাজার পাখির মেলা
নীল গগনে শীতল হাওয়া
করছে খুশির খেলা।
আকাশ নদী ভোরের পাখি
সবুজ দ্বীপের রাজা
রাজকন্যার পাহারা দেয়
হাজার দুয়েক প্রজা।
আকাশ পথে আসলো হঠাৎ
পক্ষীরাজে চড়ে
ভিনদেশী এক রাজপুত্তুর
সোনার মুকুট পরে।
বুকের ভিতর নীল পৃথিবী
দু’ফোটা অশ্রুজল
ভালোবাসার পরশ পেয়ে
মন হল চঞ্চল।
শ্বেত করবী জুঁই চামেলি
হাজার বাতির তারা
উৎসব আজ সবুজ দ্বীপে
সবাই খুশিতে মাতয়ারা।।


প্রস্তরযুগ



ট্রাম লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে অবাক পৃথিবী
আয়ুরেখা যেন ছুঁয়ে গেছে অচেনা রোদ্দুর।
জানালায় ঠেস দিয়ে বসে নিজের বিবেক
ভাঙনের শব্দ চলন্ত ট্রামের মত ...
ইশারায় ডাকে মিথ্যে স্বপ্নের মায়াজাল
চরম সংকটে একা দাঁড়িয়ে প্রস্তরযুগ।
গণিকার চোখের কাজলে ভিজে ওঠে ভোর
লজ্জাহীন চাহনিতে প্রবৃত্তির উষ্ণতা থামে না।
ট্রাম লাইন জুড়ে উৎসারিত জীবনের জলছবি
ক্লান্ত বিষণ্ণ ট্রাম মুখ থুবড়ে পড়ে মাঝ রাস্তায়।
প্রতিটি রাতে নারী পুড়ছে, গণিকা পুড়ছে –
দেখতে দেখতে আবার একটা লাজুক সকাল।
ট্রাম লাইনের ধারে রেলিং জুড়ে কোলাহল
ভোরের আলোয় নষ্টের সীমারেখা মুছে যায়।।

দুর্ভাগা ও অন্যান্য || টি এইচ বকুল




দূর্ভাগা



ঝরে গেছে স্বপ্ন গুলো
গাছের পাতার মত,
শুকনো ডালে বসে আছে
শকুন গুলো যত।
প্রহর গুনে প্রতিক্ষার-ই
সুখ গুলো যে খেতে,
তীক্ষ্ম নজর রেখেছে যে
আমার উপর পেতে।
একটি দুটি সুখের ফাগুন
আসেও যদি নীড়ে,
শনির শকুন জটলা বেঁধে
রাখে তারে ঘিরে।
বুঝে গেছি আলোর ভিরেও
আঁধার কেন আমি,
আমার সময় দিয়ে ছিলাম
ভেবে তারে দামি।
রসও গেল কষও গেল
রইলো শুকনো কাঠ,
বুকের ভিতর বসত এখন
শ্মশান পুড়ির ঘাট।
আসা যাওয়া চিতার ধোঁয়া
বাতাস ভারি হয়ে,
দৃষ্টি জুড়ে মেঘলা আকাশ
রবির আলো ক্ষয়ে।
তাই, রাত দুপুরে ঝিঁ ঝিঁ হয়ে
হৃদয় কেঁদে মরে,
দুচোখ হতে এখন শুধু
অশ্রু ফোঁটা ঝরে।।


পরিচয়হীন



এখনো অনেক শিশু
পথে করে বাস,
বিষে ভরা বায়ুতেই
নিয়ে তারা শ্বাস।
রোদ ঝড় বৃষ্টিতে
কষ্টের বানে,
কঁচি দেহ ভাঙ্গে তার
জীবিকার টানে।
অনাহাড়ী কাকে বলে
তারাই জানে ভালো,
শুধু জলে পেট ভরা
নিভে তার আলো।
তিলে তিলে বড় হয়
ভালোবাসা ছাড়া,
মা-বাবা কাকে বলে
জানেনা তো তারা।
জানে শুধু এতো টুকু
লড়তে হবে,
এ দেহে যত দিন
প্রাণটা রবে।
জীবন যুদ্ধে তাই
লড়ে প্রতিক্ষণ,
এক মুঠো অন্নের
বড় প্রয়োজন।
পৌষের রাত কাটে
কুয়াশায় মেখে,
দুটি চোখে হতাশার
ছবি যায় এঁকে।
এভাবেই চলে য়ায়
জীবনের বেলা,
অনাদরে ভেসে যায়
ভাগ্যের ভেলা।
পথে শুরু পথেই শেষ
কেউ নেই আপন,
আঁধারের খোলা আকাশ
তার যে ভূবন।।